জীবনের আলোড়ন!

 ইদানীং মেয়েটার বোটাসের হাশট্যাগে ছেলেটার দুই অক্ষর ঝুল থাকে। আর মেয়েটা থাকে ছেলেটার ব্লক লিস্ট। প্রেমিকা মেঘ দায়ে মেয়েটার এ শাস্তি হয়েছিল। 

ছেলেটা গম্ভীর স্বরে বলেছিল—আমার হিসাবে, প্রেমিকা ব্লক লিস্ট। ভার্চুয়াল নয়, বাস্তব আমিটা তোমার।

বছর কোলেক আগে, ছেলেটার হাত ধরেই মেয়েটার কবিতার প্রস্তুতি। এক ভোরে ফেসবুক মেঞ্জারে ছেলেটার নক। যদিও আপনি আমাকে বন্ধু করেছিলেন।

'আপনার প্রিয় সময় কখন?' মেয়েটা উত্তর দিয়েছিল, 'ভোর। 

আপনার?

'আমারও! প্রতি ভোরে আমার অ্যাকটিভ ফ্রেন্ড হিসেবে আপনাকে জানুন। তাই আরকি...'

মেয়েটা একটা স্মাইলি বলা। প্রশ্নটা আবার পড়ে, 'কবিতা?'

'উম্ম্, বই পড়ুন। কিন্তু কবিতা ঠিক না। আপনার টাইমলাইন পণ্য এলাম, ভালো ফলন তো আপনি!' ছেলেটা একটা স্মাইলি বলা।

পরপরই একটা কবিতা বলা 'ভালোবাসার বিস্ফোরণ'কাপ। কবিতার ছেলেটার নাম। তার পানি হল ভোরের একটা সময় আর লেখা—অমর একুশে, ঢাবি।

মেয়েটা কবিতা নিয়ে আলোচনা করতে পারে, ছেলেটা সায়েন্সকে কেন্দ্র করে প্রেমের কবিতাটা ভয় পেয়েছে। বিগ ব্যাং থিওরি...

মেয়েটা উত্তর দেয়, 'আমি যে কমার্সের পাসওয়ার্ড। কী করে বলুন তো?'

এতক্ষণে ছেলেটা অফলাইনে...

প্রতি রাতে তাদের কথা। মেয়েটা এক সময় ছেলেটা করে, মেধাবী ছেলেটা জীবন পুরো সাদাকালো করে নিজের সামনে। কয়েকটা ছেলেটার জীবন গল্প উপলব্ধি করে। মেয়েটার মন দ্রবীভূত হয়। আর ছেলেটা ভিডিও, মেয়ে শক্তি রুদ্র জীবনানন্দয়, মজুমদার আর চট্টোপাধ্যায় প্রচার এবং আরও...

আঁকিয়ে মেয়েটা ছেলেটাকে রং চেনাতে চেষ্টা করে। মেয়েটার ইচ্ছা করে তার প্যালেটের সমস্ত রং এই সাদাকালো ছেলেটার জীবনে ছড়িয়ে দিতে। ছেলেটা ভীষণ উদাসীন আর মেয়েটা অদম্য লড়াকু। আক্ষরিক অর্থেই দুজন দুই মেরুর বাসিন্দা। 

একই শহরে ওদের চলাচল কিন্তু কাকতালীয়ভাবেও ওদের কখনো দেখা হয় না।

একদিন সবকিছু এক পাশে রেখে ছেলেটা মেয়েটাকে বলেছিল, ‘আমার সঙ্গে থাকা যায়?’

‘মানে’?

‘মানে, আমার একটা মেয়ে থাকবে। লাল ফ্রক পরা। চুলে দুবেণি করা। আর হাতে চিপস।’

ব্র্যাকেটে লিখেছিল, ‘আজ সন্ধ্যায় উত্তর চাই’। এবং ছেলেটা অফলাইনে গিয়েছিল।

সন্ধ্যায় ছেলেটাই নক করে বলেছিল, ‘কিছু ভেবেছ?’

‘আমি আর কিছু ভাবছি না।’

‘মানে’?

‘মানে, আমার একটা মেয়ে থাকবে। লাল ফ্রক পরা। চুলে দুবেণি করা। আর হাতে চিপস।’

ছেলেটা একটা স্মাইলি দিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল অফলাইনে। আর সত্যিই ভার্চুয়াল জগৎ থেকে মেয়েটাকে ব্লক করেছিল।

এরপর ওদের জীবনে রুদ্র, জীবনানন্দ, বিনয়, শক্তির সঙ্গে কার্ট কোবেইন, জিম মরিসনও জড়িয়ে গেল। মেয়েটাকে অদ্ভুত নেশায় চেপে ধরল। ছেলেটার কবিতাগুলো গুছিয়ে রাখার নেশা। ছেলেটার প্রিয়গুলো, প্রিয় করে তোলার নেশা। মেয়েটা ছেলেটার জন্য লেবু রঙের পাঞ্জাবিতে নকশা তোলে। প্রতিটি ফোঁড়ে ফোঁড়ে ভালোবাসা সাজায়। ছেলেটা মেয়েটার জন্য এক পাতা নীল টিপ কেনে। কিন্তু ওদের কখনো দেখা হয় না। হয় হয় করেও হয় না...

একসময় ছেলেটা জীবনানন্দের ‘বোধ’-এ আটকে যায়। বদলে যেতে থাকে। ছেলেটা কার্ট কোবেইনকে ভাবে। জিম মরিসনে ডুবে। কিন্তু মেয়েটার কথা ভাবে না!

ছেলেটা রাস্তায় রাস্তায় হাঁটে। গায়ে কালো টি-শার্ট। তার বুকে লেখা ‘নিরভানা’।

মেয়েটার ইজেল বোর্ডে ঝোলানো পেপারে আঁকা ছেলেটার অসম্পূর্ণ ছবি।

ওরা একই সঙ্গে গ্র্যাভিটির অতলে হারায় কিন্তু কখনো এক হয় না।

মেয়েটা তবু অপেক্ষা করে তিমির রাত পেরোনো কোনো এক ভোরের। মেয়েটা ডুবে থাকে জীবনানন্দের তিমিরহননের গানে—

কোনো হৃদে

কোথাও নদীর ঢেউয়ে

কোনো এক সমুদ্রের জলে

পরস্পরের সাথে দু'দণ্ড জলের মতো মিশে

সেই এক ভোরবেলা আসনের সূর্যের সামনে

আমাদের জীবন আলোড়ন

সাভার, ঢাকা