চুপিচুপি ভালোবাসা
চুপিচুপি ভালোবাসা
💌 **চুপিচুপি ভালোবাসা (একটি কলেজ জীবনের প্রেমের গল্প)**
ঢাকার একটি ছোট কিন্তু ব্যস্ত কলেজ— সকাল আটটা বাজলেই ভিড় জমে যায় গেটের সামনে।
রায়হান সেই ভিড়ের মাঝেই প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকে। ব্যাগটা কাঁধে, চোখে কাঁচের মতো স্বপ্ন,
আর হৃদয়ে এক অজানা অস্থিরতা—
কারণ সে জানে, আজও সেই মেয়েটা আসবে, যাকে সে চুপিচুপি ভালোবাসে।
তার নাম মিশু।
চুপচাপ, শান্ত, অথচ হাসলে যেন পুরো ক্লাসরুম আলোয় ভরে যায়।
প্রথম দিন থেকেই রায়হান মিশুর দিকে তাকিয়ে থাকে।
ওর চলার ধরণ, চুলে রোদ পড়া, বইয়ের পাতায় চোখ রেখে হাসা—
সবকিছুতেই ছিল একরাশ কবিতা।
প্রথম কয়েক মাস কেটে গেল শুধু দূর থেকে দেখা, ক্লাসে একই সারিতে বসা,
আর মাঝে মাঝে চোখাচোখি হয়ে গেলে বুক ধড়ফড় করা।
বন্ধুরা রায়হানকে নিয়ে মজা করত,
“তুই ওর নামটাও জিজ্ঞেস করবি না?”
রায়হান হাসত, বলত—
“যাকে সত্যি ভালোবাসা যায়, তাকে পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো লাগে না।”
একদিন বিকেলে হঠাৎ বৃষ্টি এল।
সবাই দৌড়ে আশ্রয় খুঁজছে।
মিশু দাঁড়িয়ে ছিল কলেজের পুরনো বারান্দায়, ছাতা আনতে ভুলে গেছে।
রায়হান নিজের ছাতাটা বাড়িয়ে বলল,
“চলো, আমি নামিয়ে দিই।”
মিশু অবাক হয়ে তাকাল, তারপর হালকা হাসল।
বৃষ্টির ফোঁটা তাদের ছাতায় পড়ছিল, কিন্তু মনে হচ্ছিল,
ওরা যেন একে অপরের পৃথিবী ভাগ করে নিয়েছে।
এরপর থেকে দুজনের দেখা আরও বেড়ে গেল।
লাইব্রেরিতে একসাথে বসা, নোট শেয়ার করা, ক্যান্টিনে এক কাপ চা ভাগাভাগি করা—
সবকিছুতেই এক ধরনের মিষ্টি অচেনা অনুভব তৈরি হচ্ছিল।
একদিন ক্লাসের পর, মিশু রায়হানকে বলল,
“তুমি সবসময় চুপ করে থাকো কেন?”
রায়হান হেসে বলল,
“চুপ করে থাকলে মনটা কথা বলে বেশি।”
মিশু অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল—
সেই দিন থেকেই ও বুঝে গেল, রায়হানের মধ্যে কিছু আলাদা আছে।
সময় কেটে যাচ্ছিল।
রায়হান এখন মিশুর প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠেছে।
ওরা একে অপরের সবকিছু শেয়ার করত—
স্বপ্ন, ভয়, হাসি, কষ্ট, এমনকি ছোট ছোট গল্পও।
তবে ভালোবাসার কথা কেউই মুখে আনত না।
একদিন কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলো।
রায়হান গিটার বাজাচ্ছিল, মিশু বসেছিল সামনের সারিতে।
গান শেষ হতেই রায়হান বলল—
“এই গানটা আমি তাকে উৎসর্গ করছি,
যার চোখে আমি নিজের পৃথিবী দেখি।”
সবাই হাততালি দিল।
মিশু শুধু হাসল— কিন্তু চোখে জল এসে গিয়েছিল।
পরীক্ষা শুরু হলো, সময়ের সাথে সবাই ব্যস্ত হয়ে গেল।
রায়হান প্রতিদিন মিশুকে পড়ায় সাহায্য করত, ওর জন্য নোট বানাত।
একদিন মিশু বলল,
“তুমি কেন আমার জন্য এত করো?”
রায়হান বলল,
“কারণ তোমার হাসিটা আমার পুরো দিনের আলো।”
সেই দিন মিশু প্রথমবার রায়হানের হাত ধরেছিল।
ওদের মধ্যে কোনো প্রতিশ্রুতি ছিল না, তবু ছিল এক অটুট বিশ্বাস—
যে তারা একে অপরের জন্যই তৈরি।
পরীক্ষা শেষ হলো, কলেজের শেষ দিন চলে এল।
গেটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে সবাই, চোখে জল।
রায়হান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, ভাবছে—
এত বছরের ভালোবাসা আজই হয়তো হারিয়ে যাবে।
মিশু ধীরে ধীরে এসে বলল,
“তুমি কি সত্যি কিছুই বলবে না?”
রায়হান হাসল,
“সব কিছু তো বলেছি, শুধু মুখে বলিনি।”
মিশু কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল, তারপর হালকা গলায় বলল,
“তাহলে আজ বলো।”
রায়হান এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলল,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি, মিশু।”
বৃষ্টি নামছিল, মিশু ছাতাটা ধরল—
“আমিও।”
ওরা একে অপরের হাত ধরে দাঁড়িয়ে রইল,
যেভাবে প্রথম দিন ছাতার নিচে দাঁড়িয়েছিল।
আজও সেই জায়গায় দাঁড়ালে,
কলেজের পুরনো দেয়াল নাকি এখনো তাদের হাসির প্রতিধ্বনি শোনে।
---
### ❤️ **শেষ কথা:**
ভালোবাসা কখনো শব্দে নয়, অনুভবে লেখা থাকে।
কিছু সম্পর্ক এতটাই সত্যি হয়,
যেগুলোর শুরুটা হয় বৃষ্টিতে আর শেষটা সূর্যের আলোয়।
---

No comments