ভালো থেকো, ভালোবাসা শেষ পর্ব.....
ভালো থেকো, ভালোবাসা শেষ পর্ব....
শুভ্র দোলনায় বসে আছে। আর আমি ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি।
এ বিকেল বেলাটা কিরকম যেন বড্ড বেশি শান্ত লাগছে।
নিস্তব্ধতা ভেঙে আমি শুভ্রকে বললাম
-- আচ্ছা, তুমি আমাকে কখনো ভুল বুঝবে না তো?
শুভ্র কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো,
:--ভুল বুঝার মতো কাজ যদি করো, তাহলে ভুল বুঝতেও পারি।
শুভ্রর এরকম স্পষ্টবাদীতা আমার ভাললাগে না। প্রেয়সীকে খুশি করতে কিছু নির্দোষ মিথ্যা তো বলাই যায়, এতে কি এমন ক্ষতি।
অভিমান হলো খুব। ওকে রাগানোর জন্য দুষ্টামী করে বললাম,
--তোমার থেকে শামীম ভাই খুব ভালো ছিল।
কথাটা বলে নিজেই চমকে উঠলাম।
আমারই এক বান্ধবীর বড় ভাই উনি। কিশোরী বয়সে বেশ কয়েকবারই আমাকে রঙিন খামে মুড়ে চিঠি দিয়েছিল। তখন চিঠির প্রচলন তো উঠেই গিয়েছিল। তবুও যে কেউ চিঠি লিখে এটা আমার ধারনার বাইরে ছিল। সেসব প্রেমময় চিঠির কোনোটারই জবাব দেই নি আমি। শুধু একবার সামনাসামনি উনাকে বলেছিলাম, "শামীম ভাই, আপনি আর এসব চিঠি কখনো দিবেননা"। উনি সত্যিই এরপর আর চিঠি দেন নি। এতদিন পর হঠাৎ উনার নামটাই কেন মুখে আসলো?!
:---এই যে ম্যাম, কোথায় হারালেন? (মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল শুভ্র)
সম্ভিত ফিরে পেয়ে শুভ্রর দিকে তাকালাম। ওর চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে ও খুব করে চাইছে যে আমি আমার কথাটা ফিরিয়ে নেই।
আমি কিছুটা লজ্জা পেলাম নিজের নির্বুদ্ধিতায়। শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
--তুমিই বেস্ট। আমি সরি, তোমাকে রাগানোর জন্যই ওটা বলেছিলাম।
শুভ্র মুচকি হেসে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
............
অনেকদিন পর ঘুরতে বের হলাম শুভ্রর সাথে।
হঠাৎ করেই ও ছুটি পেয়ে যাওয়ায় সেটাকে কাজে লাগালাম।
আমি শাড়ি পরেছি। অবশ্য নিজে নিজে নয়, মা পরিয়ে দিয়েছে।
আজকে দুজন রাস্তায় দাড়িয়ে এক প্লেট ফুচকা ভাগ করে খেয়েছি। খুব ভালো লাগে শুভ্রকে নিয়ে ঘুরতে।
ওর হাতে হাত রেখে হাটার লোভে রিকশা নিতে বারন করেছি।
এখন নিজেকে মনে হচ্ছে সদ্য প্রেমে পরা কোনো লাজুক কিশোরী, যে তার প্রেমিকের হাত ধরে রাজপথে হাটছে কিছুটা ভাললাগার শিহরনে আর কিছুটা ভয়ে।
--- এই স্বর্নালী...
পিছন থেকে কে যেন ডাক দিলো আমার নাম ধরে। গলাটা কেমন যেন চেনা মনে হচ্ছে। হাটা থামিয়ে পিছনে ফিরে দেখি শামীম ভাই!
আমার সামনে এসে শুভ্রর দিকে বক্রদৃষ্টি হেনে তারপর আবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "বাহ!! আমাকে ভুলে গিয়ে ভালোই আছো দেখছি। তোমার মতো যদি নিজের অতীতটাকে ভুলতে পারলাম.. "
ঘটনার আকস্মিকতায় আমি আর শুভ্র দুজনই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। ঘোর কাটতেই দেখি শামীম ভাই চলে গেছে।
শুভ্র আমার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
--"তুমি তো কখনো বলো নি শামীমের সাথে তোমার সম্পর্ক ছিল.."
আমি অস্থির গলায় বললাম,
--"তুমি ভুল বুঝছো। উনার সাথে কোনো সম্পর্ক ছিলো না। উনি কেন মিথ্যা বললেন আমি জানি না।"
শুভ্র অবিশ্বাসী গলায় বলল, "মিথ্যা তো তুমি বলছো। সেদিন তুমি এত ছেলে থাকতে শুধু শামীমের নামটাই কেন মুখে এনেছিলে? আমি ভেবেছিলাম তুমি সত্যিই দুষ্টামী করে বলেছিলে, কিন্তু এখন বুঝলাম আমার ধারনা মিথ্যে। তুমি শুধু মিথ্যে বুলিতে আমায় ভুলাতে।"
আমি উদভ্রান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলাম শুভ্র আমাকে রাস্তায় সেখানে রেখেই চলে যাচ্ছে। আমিও ওর পিছু নিলাম। হঠাৎ দেখি বিপরীত দিক থেকে একটা বাস আসছে। কিন্তু ততক্ষনে আমি ভয়ে জমে গেছি। দিশেহারা ভঙ্গিতে একবার শুভ্রর দিকে আর একবার আমার দিকে ধেয়ে আসা বাসটার দিকে তাকালাম।
তারপর একটা চিৎকার দিলাম শুভ্রর নাম ধরে..
[রাস্তায় একটা মেয়ের রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে। পাশেই একটা ছেলে বসে আছে মেয়েটির মাথাটা কোলে নিয়ে। আচ্ছা, ছেলেটি কি মেয়েটিকে বিশ্বাস করেছে? অবশ্য বিশ্বাস না করলেও মেয়েটির কিছু যায় আসে না, সে তো সব কিছুর উর্দ্ধে।
সব দুষ্টামী ভালবাসা বাড়ায় না, কিছু দুষ্টামী সম্পর্ককে তিক্তও করে তোলে।]
সমাপ্ত
No comments