হারা-জেতার ভালোবাসা ১ম পর্ব....
হারা-জেতার ভালোবাসা ১ম পর্ব
বড়লোক বাপের উচ্ছন্নে যাওয়া মেয়ে নিরুপমা। প্রচন্ড জেদি, বদমেজাজি সাথে আগুন ঝরা সুন্দরী। বি বি এ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। এটাও বলা যায় যে সেই তার ভার্সিটি সেরা সুন্দরীর খেতাব পেয়েছে।
কিন্তু দিন দিন সে উচ্ছন্নে চলে যাচ্ছে দেখে তার বাবা মায়ের চিন্তার শেষ নেই।সারাদিন হই হুল্লোর আর আড্ডা মেরে পার করে।আর কথায় কথায় বাজি করে সবার সাথে আর বাজিটা জিতবেই জিতবে। তার মা বাবা অনেক চেষ্টা করেও তাকে বসে আনতে পারে নি।কারন তাদের একটাই মাত্র সন্তান।তাই আদর পেয়ে পেয়ে অনেক টা বেয়ারা হয়ে গেছে। আর এখন সেটা এতই বেশি যে তাদের পক্ষে তাকে কন্ট্রোল করা অসম্ভব হয়ে গেছে। তাই তার মা বাবা ঠিক করলো মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিবে।কিন্তু এই মেয়ের সম্পর্কে জানার পর কেউই তাকে বাড়ির বউ বানাতে চাইবে না।
সে এক গভীর চিন্তায় পড়লো তারা। শেষে নিরুপমার মা সাহেদা বেগম এর মনে হল তার গ্রামের বান্ধবীর কথা। ওরা গ্রামেই থাকে, তার তো একটা ছেলে আছে।আর তাকে এই অবস্থায় একমাত্র তার এই বান্ধবীই উদ্ধার করতে পারে। সাহেদা বেগম তার বান্ধবীর সাথে কথা বলে জানতে পারলো তার ছেলের লেখাপড়া প্রায় শেষ। তাইবিয়ে দিতে আপত্তি নেই তার।আর তার ছেলেও সে কথা দিলে সেটা ফেলবে না। আর ওনার নিরুপমা কে বেশ পছন্দ। তাই তিনি সাহেদা বেগম কে পাকা কথা দিলেন।
সাহেদা বেগম গ্রামে গিয়ে তার বান্ধবীকে সব বুঝাই বললো সাথে তার বান্ধবীর ছেলে কেও দেখে আসলো। ছেলে মাশাল্লাহ সুন্দর। সবদিক থেকেই পারফেক্ট কিন্তু সমস্যা ছেলে গ্রামেই লেখাপড়া করেছে তাই নিরুপমার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে না হয়তো। ছেলে কে সব বলে নিরুপমার নাম্বার দিয়ে চলে আসে। তারা বাড়িতে ফিরে নিরুপমা কে বিয়ের কথা বলে ভার্সিটি যাওয়া অফ করতে বলে কিছুদিন। নিরুপমা তো রেগে আগুন।
এভাবে কয়েকদিন থাকার পর নিরুপমার দম প্রায় বন্ধ হয়ে আসছিল তাই সে আর পারছিল না। তাই সে তার আম্মুর কাছে জানতে চাইলো ছেলের সম্পর্কে। সব জেনে নিরুপমার চক্ষু চড়কগাছ।সে আব্বু আম্মুর মুখ চেয়ে বিয়ে করতে পারে কিন্তু একটা গাইয়া খ্যাত ছেলে কে কখনোই তার স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবে না।যে করেই হোক বিয়েটা ভাঙতে হবেই। তাই নিরুপমা ছেলেটির নাম্বার তার আম্মুর থেকে চেয়ে নিল যে সে ছেলেটির সাথে কথা বলে পরিচিত হতে চায়, বিয়ের আগে ফ্রি হতে চায় জড়তা কাটিয়ে। সাহেদা বেগম ছেলেটির নাম্বার দিয়ে দিল।
নিরুপমা রাত ১০টার দিকে ছেলেটির নাম্বার এ ফোন দিল।
নিরুপমা: হ্যালো
ছেলেটি: কে কইতেছেন?
নিরুপমা: আমি...যার সাথে আপনার বিয়ের কথা ঠিক হয়েছে।
ছেলেটি:ওহ এইটা তুমার নাম্ভার? আচ্ছা শুনো তোমারে আমার মেলা পছন্দ ওইছে।মুই তুমারেই বিয়া করিম। নিরুপমা:আপনি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারেন না?
ছেলেটি: তুমি তো মোর বউ হবা, তুমার লগে শুদ্ধ ভাষায় কতা কয়ন যায় নাকি? এইটাই ঠিক আছে।
নিরুপমা: ডিসগাস্টিং.....এই শুনেন আমি আপনার মত একটা গেয়ো ভুত, গাইয়া, খ্যাত কে বিয়ে করবো না। আপনি সবাইকে না করে দেন।
ছেলেটি: কিন্তু আমি তো তুমাক ই বিয়া করিম। মুই তো সবাক বন্দু গুলাক কইয়া দিছি।
নিরুপমা: আপনাকে বিয়ে করবো না আমি মরে গেলেও করবো না।
ছেলেটি:তুমি মোক বিয়া করার জন্য পাগল হইয়া যাইয়া মনে রাখো। মোরে বিয়া করার লাইগা মরতেও চাইবা।
নিরুপমা: আপনি শুধু গাইয়া ভুত না আপনার মাথাতেও সমস্যা আছে...আমি একটা একটা বেকার অকমর্ণ ছেলে কে বিয়ে করতে পারবো কিন্তু আপনাকে নেভার এভার....
ছেলেটি:কিন্তু মুই তো তুমাক বিয়া করিম এইডা ফাইনাল।
নিরুপমা: অসম্ভব। আমি কখনোই আপনাকে বিয়ে করবো না।
ছেলেটি:আর যদি বিয়া করবার পারি
নিরুপমা:যদি না পারেন?
ছেলেটি:বাজি করবেন?
নিরুপমা: করলাম, বলেন কি বাজি...
ছেলেটি:মুই তুমারে বিয়া করবার পারলে তুমি রোজ রাতে ঘুমানোর আগে আর সকালে ঘুম ভাঙার পর তুমার ভেজা চুল দিয়ে আমার পা মুছাই দিতে হবে...
নিরুপমা: ইয়াক.....আর আপনি যদি হারেন তাহলে?
ছেলেটি: তুমি যেই ছেলের লগে বিয়া করবা তার লগে বিদ্যাসে হানিমুন করতে সব টাকা মুই দিমু....
নিরুপমা: নিরুপমা খুশি হয়ে.... অকে ফাইনাল....
তারপর নিরুপমা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিল বাসায়। সে ওই গাইয়া খ্যাত কে বিয়ে করতে পারবে না। কিন্তু তার মা তার সিন্ধান্তে অটল বিয়ে তার বান্ধবীর ছেলেকেই করতে হবে। এক সপ্তাহ এভাবে চলার পর একদিন অসুস্থ হয়ে সেন্সলেস হয়ে যায় নিরুপমা তখন নিরুপমার বাবা বিয়ে ভেঙে দেয়তার মেয়ের কথা ভেবে। নিরুপমা তো মহাখুশি সেই গাইয়ার হাত থেকে বাঁচতে পেরে… কিছুদিন বাসায় রেষ্ট নিয়ে আবার আগের মতই হয়ে গেল নিরুপমা...
বেশ মাসখানেক পর ভার্সিটি তে আসলো নিরুপমা।এসেই বান্ধবীদের সাথে আড্ডা ফাজলামিতে আবার মেতে ঊঠলো।তখনি নোটিশ করলো যে ক্যাম্পাসে একটা নতুন ছেলে একা একা বসে ষ্ট্যাডী করছে। বান্ধবীদের কে জিজ্ঞেস করলো নতুন ছেলেটি কে? বান্ধবীরা বললো নাম নিলয়, ভার্সিটিতে নতুন কিন্তু আমাদের সিনিয়র MBA করছে। কারো সাথেই তেমন মিশে না। মেয়েদের আসে পাশেও তাকে খুজে পাওয়া যায় না। প্রচন্ড লেভেলের ব্রিলিয়ান্ট & স্কলারশিপ পেয়ে MBA ভর্তি হয়েছে। সারাদিন বইয়ে মুখ গুজে থাকে এক কথায় বই পোকা কিন্তু অনেক হেল্পফুল।
মেয়েদের আসেপাশে থাকে না কেন? গে নাকি???
নিরুপমার কথা শুনে হেসে ফেললো তার সব বান্ধবীরা। রুনা হঠাত বলে উঠলো মেয়েদের সাথে মিশে না কথা টা ঠিক না আমি সেদিন আমাদের একটা সাবজেক্ট এ এসাইনমেন্ট করি নি। ওই দিন জমা দেবার শেষ দিন ছিল। আলামিন ভাইয়াকে বললাম ভাইয়া ওনাকে দেখিয়ে দিয়ে তার কথা বলতে বললো। আমি গিয়ে আমার সমস্যার কথা বলতেই তিনি ওনার পুরোনো এসাইনমেন্ট বের করে দিল।আর কভার পেজ চেঞ্জ করে আমার নাম লাগিয়ে দিয়ে জমা দিতে বললো। আমি সেদিন ওটাই জমা দিছি। আর স্যার বললো আমার এসাইনমেন্ট টাই নাকি বেষ্ট ছিল। অনেক বাহবা দিলেন।
আসলে উনি মেয়েদের সাথে প্রেম ভালবাসা রিলেশন এগুলো থেকে দুরে থাকতে চান।উনি অনেক সহজ সরল কিনা তাই।পটানোর ধান্দা করে গেলে উনি কথা বলবে না। লেখাপড়ায় হেল্প লাগলে, ওনার সাধ্যমত সাহায্য করেন। তো কি হইছে? আমি যদি তার সাথে প্রেম করতে পারি তো কি করবি বল? নিরুপমা বললো। তুই অনেক সুন্দরী কিন্তু তাকে পটাতে পারবি না। তোর আগেও অনেক মেয়ে তার উপর ক্রাশড এবং রিজেক্ট হইছে।তাই তুই ও পারবি না সেটা সিওর.....
রুনা তুই আমাকে চিনিস না??? আমি নিরুপমা, যার উপমা নাই সেই নিরুপমা। আমার মত কেউ নাই। ওয়ান পিস।আমি পটাতে পারবো না এমন কোন ছেলে এই ক্যাম্পাসে নাই। রুনার নিরুপমার জেদ সম্পর্কে ভালই ধারনা আছে। কিন্তু নিলয় ছেলেটিকে পটাতে পারবে না সেটা সে সিওর। কারন রুনার নিলয় ছেলেটির উপর একটা কনফিডেন্স জন্মে গেছে। তাই রুনাও জেদ ধরে বসলো। রুনা বললো তুই পারবি না ওই ছেলে কে পটাতে।
নিরুপমা অনেক টা রেগে গিয়ে বললো এক সপ্তাহের মধ্যে ওই ছেলে কে পটাবো এবং এক সপ্তাহ তোদের নাকের ডগার উপর দিয়ে প্রেম করবো এবং এক সপ্তাহ পর তোদের সামনেই ওর সাথে ব্রেক আপ করবো & ও আমার হাত পা জো করবে ব্রেক আপ না করার জন্য......
বেট করবি?
রুনা ভাবলো নিরুপমা অসম্ভব কিছু বলছে তাই বেট করেই ফেললো। ৫০০০ টাকা বেট হল নিরুপমা & রুনার মধ্যে। ওকে তাহলে কাল থেকেই তোর বাজির দিন শুরু রুনা বললো..... নিরুপমা বললো, ওকে জানু টাকা টা রেডি রাখো আজ ৫ তারিখ........ ১৯ তারিখে টাকা টা পাচ্ছি...... ৭দিনে পটাবো এবং ৭দিন প্রেম......
ডান......
চলবে...........
No comments