হারা-জেতার ভালোবাসা শেষ পর্ব
হারা-জেতার ভালোবাসা
আজ ১২তারিখ....
নিরুপমা নিলয় নামের ছেলেটার হাত ধরে পুরো ক্যাম্পাস চষে বেড়াচ্ছে। হঠাত করে রুনাদের সামনে এসে গেছে। তাই রুনাদের সাথে নিলয়ের পরিচয় করিয়ে দিল। নিরুপমা বললো রুনা এই হল নিলয় আমার বয়ফ্রেন্ড আর নিলয় এই হল রুনা আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। নিলয় আর রুনা হ্যান্ডশেক করলো। সেদিনের মত বিদায় নিল যে যার মত। ..
এদিকে নতুন প্রেমে পড়ে নিলয় তো পাগল হয়ে গেছে। আসলে ক্যাম্পাস এর সেরা সুন্দরী যখন তাকে এসে বললো যে সে তাকে পছন্দ করে তখন নিলয়ের তো চাঁদ হাতে পাবার অবস্থা। তাই পরের দিন গিয়েই বলে দিয়েছিল যে নিলয় ও তাকে পছন্দ করে।সেদিন থেকেই প্রেম।নিরুপমা যে বাজি করে প্রেম করছে নিলয় বেচারা সেটা জানেই না।আর নিরুপমা ও হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়ে গেছে। তার মাথায় এখন একটা চিন্তা তাকে বাজি জিততে হবে। আর নিরুপমা কখনোই কোন বাজি তে হারে নি। তাই এবারো হারতে চায়না। সারা সপ্তাহ জুড়ে কপোত কপোতীর মত প্রেম চুটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছে দুজনই…
আজ ১৯তারিখ....
নিরুপমা নিলয় কে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরতে ঘুরতে রুনা আলামিনরা যেখানে আড্ডা দিচ্ছিল সেখানে এসে হঠাত দাড়িয়ে গিয়ে সবাইকে ডাক দিল।সবাই আসলে নিরুপমা নিলয় কে বললো নিলয় গেম অভার। নিলয় বললো মানে? তখন নিরুপমা সব খুলে বললো আর রুনা নিলয় আলামিন সবার সামনেই বাজির ৫০০০টাকা নিরুপমা কে দিয়ে দিল। নিলয়ের আকাশ ভেঙে মাথায় পড়ার অবস্থা। নিলয় নিরুপমার হাত ধরে বাচ্চা ছেলের মত কাঁদতে লাগলো। প্লিজ নিরুপমা এমন করো না তোমার বাজির টাকা টা আমি দিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু নিরুপমার মায়া হল না। সে বিজয়ীনির বেশে অট্টহাসি হ দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো কিরে রুনা এই তোর সেই নিলয়।আমার কাছে এখন হাত ধরে প্রেম ভিক্ষা চাইছে। বলেই একটা অট্টহাসি দিল......
আলামিন, রুনা, প্রান্ত, মনিরা সবাই নিরুপমার এই রুপ দেখে অবাক। কিভাবে এতটা কঠিন মনের হতে পারে একটা মেয়ে। নিলয় কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়লো ঘাসের উপর।নিরুপমা নিলয়ের হাত থেকে হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছিল হাসি মুখেই। সবাই নিরুপমার আচরনে হতবাক.... নিরুপমা চলে যাচ্ছে.....
হারা-জেতার ভালোবাসা
হঠাত নিরুপমা শুনতে পেল পিছনে নিলয় আর কাঁদছে না।নিলয় রুনা দুজনেই হেসে উঠছে একসাথে।নিরুপমা অবাক হয়ে ফিরে আসলো সবার কাছে।তখন দেখলো নিলয় আলামিন ভাইয়ার কাছ থেকে ২৫০০০টাকা নিচ্ছে। নিরুপমা রুনা কে জিজ্ঞেস করলো এটা কিসের টাকা। তখন আলামিন বললো, আমি বাজি করেছিলাম নিলয়ের সাথে। নিলয় বলেছিল তুমি নিজে এসে নিলয় কে প্রোপোজ করবে এবং এক সপ্তাহ প্রেম করে নিজেই ব্রেক আপ করবে। আমি বলেছিলাম নিরুপমা তোমাকে পাত্তাই দিবে না।তাই আমি ওর সাথে বাজি করেছিলাম কিন্তু আমি হেরে গেছি তুমি ওকে প্রোপোজ করে এক সপ্তাহ প্রেম করে এখন নিজেই ব্রেক আপ করছো তাই নিলয় জিতে গেছে।
নিরুপমা অবাক না হয়ে পারলো না। সে তো বাজি করছে রুনার সাথে ৫০০০ টাকা আর নিলয় সেটাই করেছে ২৫০০০ টাকা। কিভাবে? তার মানে কি রুনা??? তখন রুনা বলা শুরু করলো, বললো নিরুপমা স্যরি দোস্ত।তোর সাথে এই বাজি করার জন্য টাকা টা আমাকে নিলয় ভাইয়াই দিয়েছিল।যেদিন এসাইনমেন্ট জমা দেবার পর নিলয় ভাইয়া কে ধন্যবাদ জানাতে যাই তখন তিনি এই বাজি টা করতে বলেন আর এটাও বলেন যে বাজির টাকা উনি দিবে। তাই আমি বাজি টা করি। বাকি টা নিলয় ভাইয়ার কাছেই শুনে নে...
হচ্ছে টা কি নিলয়? নিরুপমা বললো। নিরুপমা তুমি এতটাও সুন্দরী বা চালাক নও যে আমার মত ছেলে কে এক সপ্তাহে তোমার ন্যাকামি দেখিয়ে প্রেমে ফেলতে পারবা।তুমি যেদিন আমাকে প্রথম নোটিশ করো। সেদিন আমি তোমার ব্যাপারে আলামিন এর কাছে জানতে চাই। তাতেই বেরিয়ে আসে তোমার এই ভয়ংকর রুপ টা। তাই ভাবলাম তোমাকে একটা শিক্ষা না দিলেই নয়।তখন আলামিন বললো তুমি নাকি আমাকে পাত্তাই দিবে না। আর তখনি বাজি টা করলাম আলামিন এর সাথে ২৫০০০ টাকা। আর সেটার ২০% মানে ৫০০০ টাকার বাজি করতে বললাম রুনা কে তোমার সাথে। রুনা ও তাই করলো। আর আমিও তোমার ন্যাকু ন্যাকু প্রেম সহ্য করলাম ১সপ্তাহ। আর হ্যা তুমি নাকি কখনো হারো নাই??? হারতে শিখো আজ থেকে, হারের একটা আলাদা মজা আছে।
নিরুপমা জীবনে প্রথম কোন বাজিতে হেরে বাসায় গেল।সারারাত ঘুম আসছে না।সে কখনোই হারতে পারে না।সে তার হার টা মেনে নিতে পারছে না।তাকে জিততেই হবে যেভাবেই হোক। এখন জিততে হলে একটাই কাজ আছে সেটা হল নিলয়ের সাথে ব্রেক আপ না করা। কিন্তু সেটা সে আজকেই সবার সামনে করছে। তাই এটা সম্ভব না। কিন্তু করবে কি সে নিলয়ের কাছে তার হার টা মেনে নিতে পারছে না কিছুতেই।
অবশেষে নিরুপমা একটা চরম সিন্ধান্তে উপনিত হল।যা কারো কল্পনাতেও আসতে পারে না শুধু মাত্র একটা বাজি জেতার জন্য। না না একটা নয় ২টা বাজি জিতবে সে যদি এইকাজ টা করতে পারে।
প্রথমত... সে কাল কে নিলয় কে বিয়ে করবে জোর করে রাজি করিয়ে হলেও। প্রয়োজন হলে সুইসাইড এটেম্প করবে। নিলয় কে বিয়ে করলে তাদের ব্রেক আপ হলো না মানে নিরুপমা জিতে গেল বাজি টা।
দ্বিতীয়ত... নিলয় আম্মুর পছন্দ করা গাইয়ার থেকে অনেক ভালই আছে। সো নিলয় কে বিয়ে করলে ওই গাইয়ার সাথে বাজি তে জিতবে। হানিমুন খরচ টা তার কাছে উসুল করবে।
যেই ভাবা সেই কাজ। পরের দিন নিরুপমা ক্যাম্পাসে গিয়ে নিলয়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে সবার সামনে নিলয় কে বললো তাকে বিয়ে করতে। নিলয় বললো অসম্ভব আমি তোমার মত মেয়ে কে কখনোই বিয়ে করবো না। তখন নিরুপমা নিলয়ের হাত ছেড়ে দিয়ে সবার সামনেই দৌড়ে ৫ তলা ভবনের উপর উঠে চিতকার করে বলতে লাগলো সবার উদ্দেশে নিলয় তাকে আজকেই বিয়ে না করলে সে সুইসাইড করবে। কিছুক্ষন এর মধ্যেই পুরো ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী উপস্থিত হলো সেখানে। আর সবার নিরুপমার জেদ সম্পর্কে ভালই ধারনা আছে। তাই সবাই নিলয় কে হাত জোর করে হলেও বিয়েতে রাজি করিয়ে কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে টা দিল...
কাজি অফিস থেকে বের হয়েই নিরুপমার মুখে প্রথম কথা ছিল.... বাজি টা আমিই জিতলাম আর তুমি হারলে। ব্রেক আপ আর হলো না। নিরুপমা কখনো কোন বাজিতে হারে না মাইন্ড ইট.... নিলয় বেচারা অবাক হবে নাকি শকড হবে কিছুই বুঝতেছে না। একটা মেয়ে শুধু মাত্র একটা ৫০০০টাকার বাজির জন্য একটা ছেলে কে সুইসাইডের ভয় দেখিয়ে রাজি করিয়ে বিয়ে করতে পারে বলে তার ধারনার বাইরে ছিল। তাই আপাতত নিলয় কিছুই বললো না।
নিরুপমার বিয়ের খবর টা এতক্ষনে তার আব্বু আম্মু ও জানতে পেরেছেন।প্রথমে রাগ হলেও পরে পুরো ব্যাপার টা জানতে পেরে মেনে নিয়েছেন তাই নিলয় কে নিয়েই নিরুপমা কে বাসায় যেতে বলছে।সন্ধ্যার দিকে নিরুপমা নিলয় কে নিয়ে তাদের বাসায় আসলো। এসে দেখে বাড়িতে মোটামুটি একটা বিয়ের আমেজ এসেছে।বাড়িতে কিছু আত্বীয়রাও এসেছে, যাদের কাউকে চেনা আবার কেউ কেউ অচেনা।নিরুপমার সেগুলোতে কোন খেয়াল নেই।তার চিন্তা হল সে এক বারে ২টা বাজি জিতেছে এবং তাকে কেউ কখনো কোন বাজিতে হারাতে পারে নি। .
হারা-জেতার ভালোবাসা
রাত ১২ টা....
নিরুপমার ঘরে বাসর সাজানো হয়েছে তাদের।নিরুপমা খাটের উপর বসে আছে। নিলয় আসলো রুমে।নিলয় বেচারার মন খারাপ।নিরুপমা যদিও বাজি জেতার জন্য নিলয় কে বিয়ে করেছে কিন্তু এমনিতে নিলয় কে তার খারাপ লাগে না।দেখতে শুনতে ভাল ব্রিলিয়ান্ট, হ্যান্ডসাম, অনেক মেয়ের ক্রাশ, স্বামী হিসেবে এমন ছেলেই চায় মেয়েরা।তাই নিরুপমা মনে মনে নিলয় কে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছে। নিলয় নিরুপমার রুমের বারান্দায় গিয়ে বসলো মন খারাপ করে। .
হঠাত নিরুপমার মনে হল গাইয়া টাকে বলা দরকার যে সে অন্য একটা ছেলে কে বিয়ে করেছে & কয়েক দিন এর মধ্যেই হানিমুনে যাবে। তাই হানিমুনে যাওয়ার টাকা টা রেডি রাখো। নিরুপমা ফোন দিতেই গাইয়া টা ফোন রিসিভ করলো। নিরুপমা তো এক নিশ্বাসে সব বলে ফেললো।
নিরুপমা:আমি কিন্তু পরের সপ্তাহে হানিমুনে যাবো।
ছেলেটি: সেটা তো হবে না। মুই তো পরের সপ্তাতে হানিমুন যাবার পাইম না।মোর ফাস্ট সেমিস্টার এর ফাইনাল পরীক্ষা আছে।
নিরুপমা: আপনি কেন যাবেন? আপনি বাজির টাকা দিবেন আমি আমার স্বামী কে নিয়ে হানিমুনে যাবো।
ছেলেটি:টাকা না হয় দিলাম কিন্তু স্বামীকে ছাড়া হানিমুনে কিভাবে যাবে [ ফোন কানে ধরে বলতে বলতে নিলয় রুমে আসলো।]
এসে নিরুপমার সামনে বসে বললো স্বামী কে ছাড়া কি হানিমুনে যাওয়া যায়? নিরুপমা তো অবাক? আমি এতক্ষন কার সাথে কথা বলছিলাম। আর এতক্ষন তো গাইয়া টা আঞ্চলিক ভাষাতেই কথা বলছিল আর এখন এত সুন্দর করে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলছে কি করে? তখন দেখলো কথা গুলো মোবাইল থেকে নয় সামনে থেকে আসছে।তখন নিলয় বললো চুল ভেজা আছে?? ভেজা চুল দিয়ে পা মুছানোর কথা ছিল!!!!!!!!..
নিরুপমা হা করে অবাক হয়ে বললো, নিলয় তার মানে তুমি আম্মু বান্ধবীর ছেলে??
নিলয় বললো, বলেছিলাম আমাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হবা, সুইসাইড ও করতে চাইবা... করেছো। বলেছিলাম তোমাকেই বিয়ে করবো...করেছি। এখন থেকে প্রতিদিন ভেজা চুল দিয়ে সকাল আর রাতে পা মুছে দিবা। নিরুপমা বললো সব করবো আগে বলো এতসব করলে কি করে?
নিলয় বললো, যেদিন তোমার আম্মু তোমার সম্পর্কে আমাকে বলে সেদিনই বুঝেছিলাম তুমি কক্ষনো কোথাও হারো নি। তাই এমন জেদি আর বদমেজাজি হয়েছো। আমি চাইলে তোমার সাথে মিট করে কথা বলেই বিয়ে টা করতে পারতাম। কিন্তু সেটা করলে তোমার জেদি আর বদমেজাজি অভ্যাস টা থেকেই যেত।তাই সেটা না করে তোমার আম্মুর কাছ থেকে তোমার নাম্বার টা নিয়ে ফোন এ রাখলাম।আর প্লান করলাম কিভাবে তোমাকে ঠিক করা যায়। আর তুমি যেদিন তোমার আম্মুর কাছে আমার নাম্বার নিছো তখনি আন্টি আমাকে বলে দিছে।আর আমিও তোমাকে খেপিয়ে দিয়ে বিয়ে না করার বাজি করালাম। কারন আমি জানতাম
বাজির কথা বললেই তুমি রাজি হবে, তারপর ভার্সিটি তে এডমিশন। প্লান মতই সব হল আর তুমি বিয়েও করলে।
তার মানে তুমি সব গুলো বাজি জিতলা???? নিরুপমা বললো। আমাকে কি সত্যি সত্যি তোমার পা ভেজা চুল দিয়ে মুছে দিতে হবে??. নিলয় বললো না হবে না।তুমি সব সময় আমার বুকে থাকবা।আর হ্যা আরো একটা বাজি জিতেছি।সেটা হলো আমার স্বশ্বুর আব্বার কাছে। সেটা হল আমি যদি ওনার মেয়ে কে ওনার মেয়ের ইচ্ছাতেই বিয়ে করতে পারি তাহলে হানিমুন এর বাজেট উনি দিবেন সেটা নিরুপমা যেখানে যেতে চাইবে......
তো নিরুপমা বাজিতে নাকি সব সময় জিতে যাও কখনো হারাতে পারে নি কেউ। এখন তো দেখছি একটা বাজিও জিততে পারলে না। নিরুপমা:কে বললো আমি বাজি জিতি নি...
নিলয়:কোথায় জিতলা বাজি
নিরুপমা: আমি বাজিতে জিতেনিলাম সেই মানুষ টাকে যার কাছে হাজার বার বাজিতে হেরে যেতেও শান্তি আছে।সেই মানুষ টাই
আমার সব থেকে বড় বাজি জেতা।.....
আর সেটা আমার গাইয়া খ্যাত নিলয়.....
নিলয়: তাই নাকি?? তাহলে চল এখন বিছানায় তোমাকে হারিয়ে দিয়ে জিতিয়ে দেই আবার।
নিরুপমা: ইশ রে শখ কত... আগে ভাল করে প্রোপোজ কর.... তারপর ভাববো......
নিলয়: বউকে বাসর রাতে প্রপোজ করা লাগবে? পারবো না..
নিরুপমা: পারতেই হবে... জোর করে প্রপোজ করাবো।
নিলয়: পারবা না প্রপোজ করাতে বাজি কর....
নিরুপমা: ওকে বাজি ........ বলো কি বলবে না?
নিলয়: I LOVE YOU...
নিরুপমা: হেরে গেছে হেরে গেছে… প্রপোজ করেছো...
নিলয় : না না করি নি এমনি বলছি ওটা.....
এভাবেই চলতেই থাকবে বাজি..... একজন হেরেও জিতে যাবে আর একজন অন্য জন কে জিতিয়ে দিয়ে জিতে যাবে সেই মানুষ টাকে যার মুখে জিতের হাসিটা পৃথিবীর সব কিছুর থেকেও বেশি মুল্যবান.....
চলুক তাদের খুনশুটির ভালবাসা......
No comments