Header Ads

তোর পিরীতে পাগল হইলাম রে

তোর পিরীতে পাগল হইলাম রে 

পর্ব_২


“কাল সকালের বাসে আমি চট্টগ্রাম ফিরে যাব।”



ডাইনিং টেবিলে আরজু কথাটা বলতেই বেশ বড়সড় একটা বিস্ফো/রণ ঘটার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলো।প্রার্থনা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে মোমেন সাহেবের দিকে তাকালেন যিনি র/ক্ত চক্ষু নিয়ে আরজুর দিকে তাকিয়ে আছেন অথচ মেয়েটার সেসবে কোন মাথা ব্যথা নেই।চুপচাপ আপন মনে খেয়ে যাচ্ছে।প্রার্থনা বুঝল আজ আবারও একটা অশান্তি হবে।প্রার্থনার ভাবনার মাঝে মোমেন সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে আরজুকে বলল,


“এক সপ্তাহ পর তোমার বোনের বিয়ে সেটা তুমি জানো না?”


আরজু খেতে খেতেই স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,


“না জানার কিছু নেই।”

“তারপরও যাওয়ার কথা বলছ কোন আক্কেলে?”


আরজু এবার খাওয়া ছেড়ে নিজের বাবার দিকে তাকালো।দৃষ্টি তার অত্যন্ত শান্ত এবং স্বাভাবিক।


“বিয়েটা আপার।আমার থাকা না থাকা তে কিছু যায় আসে না।”


“বড় বোনের বিয়েতে ছোট বোন কেন নেই এই নিয়ে পাত্রপক্ষের লোকজন প্রশ্ন করলে কি উত্তর দেবো আমরা?”


আরজু নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,


“ওদের কথার কিংবা ভাবনার এত গুরুত্ব আমার কাছে নেই।তারপরও যদি আপনার মান সম্মানে খুব বেশি আঘাত লাগে তাহলে বরং বলে দেবেন যে ম/রে গেছে প্রার্থনার ছোট বোন।ব্যাস কথা আর ভাবনা দুটোই শেষ।”


আরজু কথাটা বলে উঠে চলে যেতে নিলে মোমেন সাহেব পুনরায় প্রশ্ন করে উঠলো,


“চট্টগ্রাম ফেরার এত কিসের তাড়া তোমার?কি এমন কাজ করো নাকি কেউ অপেক্ষায় আছে?”


আরজু মোমেন সাহেবের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে প্রিথুল বলে উঠলো,


“বোঝোনা বাবা কিসের এত তাড়া?পেট চালাতে হবে তো তারই ব্যবস্থা করতে হবে।হয়তো আগে থেকে অনেক কে বলে রেখেছিল তাই এখন ফেরত যাওয়ার ভীষণ তাড়া।”


প্রিথুলের এমন নোংরা কথা শুনে প্রার্থনার নিজেরই ভীষণ লজ্জা হলো।অনেক সাহস সঞ্চয় করে প্রিথুল কে বলল,


“নিজের বোনের সম্বন্ধে কথা বলার আগে একটু তো ভেবে বলবে ভাইয়া।যা জানো না অযথা সেটা নিয়ে কথা কেন বলছো?ওর পরিশ্রমের প্রতি নোংরা ইঙ্গিত করা ছেড়ে দাও।”


প্রার্থনার কথাটা শেষ হতে না হতেই প্রিথুলের হিংস্র কন্ঠ ওকে থামিয়ে দিল।অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,


“তুই চুপ কর।তোর মতন নষ্টা মেয়ের মুখে এসব কথা শুনলে আমার ব/মি পায়।প্রেমিকের সাথে ফুর্তি করতে গিয়ে ধরা খেয়ে এসে আবার নীতি বাক্য ঝাড়ছে।”


লজ্জায় অপমানে প্রার্থনার দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।কোন ভাই যে নিজের বোনকে এভাবে অপমান করতে পারে সেটা প্রিথুল কে না দেখলে হয়তো কেউ বুঝবে না।তাও আবার মা-বাবার সামনে।তার থেকেও বেশি অবাক করা কথা হলো নিজের মা বাবা ছেলেকে শাসন না করে চুপচাপ মেয়েকে অপমানিত হতে দেখছে। প্রার্থনা কান্না জড়িত কন্ঠে বলল,

“আমি নোংরা কিছুই করিনি।” 


কথাটা বলার সাথে সাথে প্রিথুল প্রার্থনার দিকে তেড়ে এসে ওকে মা/রতে উদ্দ্যত হলে ওদের থেকে একটু দূরে দাঁড়ানো আরজু টেবিলের উপর থেকে একটা স্টিলের গ্লাস নিয়ে প্রিথুলের দিকে ছুঁড়ে মা/রল।খুব জোরে ব্যথা না পেলেও এতে প্রিথুল কে আটকাতে সফল হলো।আরজু না আটকালে আজ আবারো প্রার্থনা কে নিজের ভাই নামক ক/সা/ইয়ের হাতে মা/র খেতে হতো।এদিকে আরজুর করা আঘাতে প্রিথুল যেন আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠলো।এবার আরজুর দিকে তেড়ে যেতে নিলে আরজু টেবিলের ওপর থেকে একটা কাটা চামচ হাতে নিয়ে সাবধানী গলায় প্রিথুল কে উদ্দেশ্য করে বলল,


“আর এক পা যদি আমার দিকে এগিয়েছো তুমি আমি কিন্তু আজ সত্যি ভুলে যাবো যে মানুষ হত্যা পাপ।এই পাপই কিন্তু আমি করবো।যদি আমার গায়ে আজ তোমার হাত পড়েছে তবে কিন্তু তোমার শরীর থেকে র/ক্ত বের করতে আমি আজ দু বার ভাববো না।”


প্রিথুল আবারো ক্ষিপ্ত গলায় আরজু কে কিছু বলতে নিলে মোমেন সাহেব ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেন।রাগী কন্ঠে বললেন,


“কি শুরু করেছে তোমরা?যার যা ইচ্ছে হচ্ছে তাই করছে,তাই বলছে।আমি তো এখানে উপস্থিত আছি।” 


আরজু তাচ্ছিল্য ভরা কন্ঠে বলল,


“আপনি না বললে তো বুঝতামই না যে আপনি এখানে উপস্থিত আছেন।তা কেন আছেন?আমার মায়ের এই গর্ভের কলঙ্কটা আমার সাথে কি করে সেসব দেখতে নাকি নতুন করে আবার আপনিও কোন তামাশা করবেন?”

“নিজের সীমা ছাড়িও না আরজু।”


“এই কথাটা আগে নিজের ছেলেকে বলুন।আর এই যে সৎ,নীতিবান,ভদ্র,সুশীল প্রিথুল হাসান তোমাকে বলছি,আপা কোন নষ্টামি করতে গিয়ে ধরা পড়েনি।তোমরা একটা স্বাভাবিক বিষয়কে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য রংচং মাখিয়ে সেটাকে নোংরা করে তুলেছো।তুমি নিজে যখন নষ্টামি করো তখন তোমার এসব বমি বমি ভাব কোথায় যায়?তুমি যখন অন্যের বউকে ভাগিয়ে নিয়ে আসো তখন এসব মনে হয় না? আপা অন্তত তেমন কারো বরের সাথে প্রেম করেনি।তোমাকে দেখলে না আমার বমি পায়।” 


“বাবা আরজু কে থামতে বলো।এরপর কিন্তু তুমি আমায় আটকাতে পারবেনা।আমি কিন্তু ওকে খু/ন করে ফেলব।”


আরজু বক্র হেসে বলল,


“তবে মনে রেখো আমিও খু/নির বোনই হবো।দুজনের শরীরে একই র/ক্ত বইছে,একই বাপের ছেলে মেয়ে আমরা।তুমি এর আগে কতগুলো খু/ন করেছো জানিনা তবে জেনে রাখো আমার হাতের প্রথম খু/ন তুমিই হবে।”


নাসিমা বুঝলেন যে পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে।এরপর যে কোন অঘটন ঘটে যেতে পারে।আরজু কে দু চারটে কথা শুনিয়ে জোর করে তিনি প্রিথুল কে নিয়ে ঘরে চলে গেলেন।যাওয়ার আগে প্রিথুল যেন চোখের ইশারায় আরজু কে শাসিয়ে গেল।ওর থেকে যেন সাবধানে থাকতে বলল।আরজু কিছুক্ষণ নিষ্কপলক দৃষ্টিতে মোমেন সাহেবের দিকে তাকিয়ে থাকলো।কেন যে আরজু এই মানুষটার কাছে আশা করে যে উনি আরজুর পাশে দাঁড়াবে কে জানে?আজ অব্দি তো কখনোই কোন বিষয়ে সমর্থন করেনি আরজু কে তারপরেও আশা করে।

হয়তো বাবা বলে।


আরজুর ভাবনার মাঝেই মোমেন সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,


“কাল চট্টগ্রাম যাওয়া হচ্ছে না তোমার।

আগে তোমার বোনের বিয়েটা হয়ে যাক তারপরে যেখানে ইচ্ছে যেও।তখন জাহা/ন্নামে গেলেও আমার আফসোস থাকবে না।” 

“জাহান্নামেই তো আছি আবার কোন জাহান্নামে যেতে বলছেন?এর থেকেও নিকৃষ্ট জায়গা আছে নাকি?এর থেকেও আরো কষ্টে থাকা যায় এমন কোনো জায়গা যে আছে জানতাম না।খোদা তো তার বান্দাদের দিয়ে দুনিয়াতেই জাহান্নাম দেখিয়ে দিল,আর কত শাস্তি পাব?”


“প্রার্থনার বিয়ে না হওয়া অব্দি তুমি যাবে না কোথাও।”


“চোখের সামনে চল্লিশ বছরের বুড়োর সাথে আপার বিয়ে আমি দেখতে পারবো না।অন্যের জীবন নষ্ট হতে দেখতে আপনারা খুব পছন্দ করেন তাহলে বরং ওটা আপনারাই দেখুন।আমি একটা র/ক্তে মাংসে গড়া মানুষ।আমার মাঝে একটু হলেও মনুষ্যত্ব আছে তাই এসব আমি সহ্য করতে পারবেনা।আমি যখন বলেছি যাব তার মানে যাবই।” 


কথাটা বলে আরজু চলে যেতে নিলে পিছন থেকে মোমেন সাহেব হুশিয়ারি দিয়ে বলল,


“মনে রেখো কাল যদি তুমি আমার কথা অমান্য করে বাড়ির বাইরে পা রেখেছো তাহলে কিন্তু আর কোনদিন এই বাড়িতে পা রাখতে পারবে না।এই বাড়ির দরজা তোমার জন্য চিরদিনের মত বন্ধ হয়ে যাবে।যা করবে ভেবেচিন্তা করো।”


আরজু পিজন ফিরে তাকিয়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলল,


“আলহামদুলিল্লাহ।ওই যে একটা কথা আছে না যে ছিটকিনি দরজার দুই পাশেই থাকে মনে রাখবেন আমিও ঠিক সেটাই করব।বছরে দু একবার আসতাম আপার জন্য,সেই আপায় যদি না থাকে এমনিতেও আর এ জাহান্নামে আসবো না।আমার আপা হচ্ছে মরুভূমির বুকে ফোঁটা এক পবিত্র ফুল।অতদূর থেকে মাঝে মাঝে ওর আবদারে ওকে সতেজ করতে আসতাম কিন্তু এখন তো আপনারা সেই ফুলটাকে উপড়প ফেলছেন।কিসের খোঁজে আমি আসবো তাহলে?”


কথাটা বলে আরজু সেখান থেকে চলে গেল।

পিছু পিছু প্রার্থনাও গেল।মোমেন সাহেব ওর যাওয়ার পথে কটমটে দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন শুধু।এই মেয়ের কথা আর যুক্তির সাথে তিনি কোনদিনও পেরে উঠতে পারেননি।আর নিজের এই পরাজয়ই হয়তো আরজুর প্রতি ওনার রাগের সব থেকে বড় কারণ।মেয়েদের কাছে হেরে যাওয়া মানে যে পুরুষত্বে প্রশ্ন ওঠা,যা ভীষণই অসম্মানজনক।

_____


“তুই সত্যি আমার বিয়েতে থাকবি না আরু?”


প্রার্থনার প্রশ্নে আরজু গম্ভীর গলায় নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,


“বিয়ে কেন বলছো?বলো তোমার জানাজায় আমি থাকবো কিনা।” 


প্রার্থনা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,


“বেশ তোর কথাই মেনে নিলাম।তা আমার জানাজায় থাকবি না তুই না?”


“আমার আপার জানাজায় থাকতে পারবো না আমি।আমায় ক্ষমা করে দিও তুমি।”


“তুই না বলতি যে আমার বিয়েতে তুই নিজের হাতে সাজিয়ে দিবি আমায়?”


প্রার্থনার এই কথার প্রেক্ষিতে আরজু থমকালো। নিজেদের জীবন নিয়ে তাদের কত আশা ছিল,কত স্বপ্ন ছিল,সময়ের বিবর্তনে আজ সব শেষ।


আরজুকে চুপ করে থাকতে দেখে প্রার্থনা পুনরায় বলল,


“সাজাবি না তোর আপাকে?”


আরজু তাচ্ছিল্য ভরা কণ্ঠে বলল,

“বিয়ের জন্য সাজাতে চেয়েছিলাম আপা তোমার জানাজার জন্য না।নিজের হাতে সাজিয়ে গুছিয়ে তোমায় কবরে পাঠাবো এতটা সাহসি তোমার আরু এখনো হয়নি।বাবা,মা,ভাইয়ার সাথে তর্ক করতে পারি,ঢাকা শহরে একা থাকতে পারি, অনেক রাতে বাড়ি ফিরতে পারি,কেউ বাঁকা চোখে তাকালে তার চোখ উপড়েও ফেলতে পারি কিন্তু তোমাকে সাজাতে পারব না আমি।”


কথাটা বলে আরজু আবারো নিজের কাজে মনোযোগ দিল।প্রার্থনা আনমনে কিছু একটা ভেবে আরজুকে প্রশ্ন করল,


“তুই তো বিশ্বাস করিস আরু যে আমি কোন নোংরামি করিনি তাই না?”


আরজুর কাজের হাতটা থেমে গেল।শীতল দৃষ্টিতে প্রার্থনার দিকে তাকালো।


“বিশ্বাস না করলে কি তখন ওভাবে প্রতিবাদ করতাম আপা?”


“তাহলে এই নিয়ে কিছু শুনতে চাইলি না কেন?”


“নিজের আপাকে আমার এসব নোংরা প্রশ্ন করতে বিবেকে বাঁধবে।সব থেকে বড় কথা আমি জানি তুমি খারাপ কিছু করতে পারোনা তাহলে অযথা জিজ্ঞেস করতে যাব কেন?”


“আমি যখন কলেজে যেতাম ওই সাহিত্য আমাকে এক নজর দেখার জন্য রাস্তায় রোজ দাঁড়িয়ে থাকতো।জানিস শুধু আমায় দেখতো,কখনো কথা বলার চেষ্টা করেনি,আর না কখনো পিছু নিতো।এরকম চলতে চলতে কেমন করে যেন আমারও ওকে ভালো লাগতে শুরু করলো।ঝড় বৃষ্টি কিছু মানতাম না।আমি ছাতা নিয়ে কলেজ যেতাম আর ও বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতো আমাকে দেখার জন্য।”


“মানুষ কত তাড়াতাড়ি বদলে যায় তাই না আপা?একসময় সে তোমাকে দেখার জন্য কত কষ্ট করেছে আর এখন তুমি তার প্রতীক্ষায় কত প্রহরই না কাটাচ্ছো।অথচ সে ভীতুদের মতন তোমাকে ছেড়ে পালিয়ে গেল।একবারও ভাবলো না যে এই ঘটনার পর তোমার কি অবস্থা হতে পারে।এটাই ভালোবাসা তাইনা আপা?”


আরজুর শেষের বাক্যে ভালোবাসা শব্দটার প্রতি প্রকাশ পেল তাচ্ছিল্য আর একরাশ ঘৃণা।ভালোবাসা শব্দটাকে যেন সে বিশ্বাসই করতে পারে না।তার জীবনে সবথেকে ঘৃণিত শব্দ ভালোবাসা। 


“জানিস আরু সেদিন সবকিছু যেন আগে থেকেই ঠিক ছিল।ভাইয়ারা যেন আগে থেকেই জানতো যে আমি ওখানে থাকবো।”

প্রার্থনার এমন কথা শুনে আরজু ভ্রুঁ কোঁচকালো। সন্দেহী কন্ঠে বলল,


“তুমি বলতে চাইছো ফিরোজরা এসব করেছে?”


“আমি নিশ্চিত না তবে আমার এটাই সন্দেহ হচ্ছে।”


“কেন সন্দেহ হচ্ছে?” 


“যখন আমি ওর সাথে দেখা করার জন্য দুপুরে সবার আড়ালে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম তখন আমার কোন সমস্যা হয়নি।ওই সময়টাতে রোজ বাড়ির উঠোনে ফিরোজ আর ভাইয়া দলবল নিয়ে বসে থাকে।আমাকে অনেক লুকিয়ে বের হতে হয় কিন্তু সেদিন ফাঁকা ছিল।সেদিন আমরা প্রথম পুকুর পাড়ের কাছে পুরনো বাড়িটার কাছে দেখা করেছিলাম।সচরাচর ওই জায়গাটা কখনো ফাঁকা থাকে না কিন্তু সেদিন ছিল।” 


“আর কিছু না?”


“মা আমাকে বের হতে দেখেছিল কিন্তু কোন প্রশ্ন না করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে বলেছিল।আমি আর সাহিত্য দুজনে শুধু স্বাভাবিক কথাবার্তা বলছিলাম।হুট করে ফিরোজের ছেলেরা এসে হট্টগোল শুরু করে দিল।এরপর মানুষজন জড়ো হয়ে যাওয়ার পর ওকে মা/রতে আরম্ভ করলো।সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছিল যে ভর দুপুরে পুরনো বাড়িতে নোংরামি করছি।ছি ছি কি সব দেখে ফেললাম আমি।”


ঘৃণায় আরজুর শরীর রি রি করে উঠলো।নিজের রাগটুকু নিয়ন্ত্রণ করে বলল,

“তারপর?”


“তারপর ভাইয়া বাবাকে নিয়ে এলো।ফিরোজ বলল আমাদের দুজনকে নাকি ওই পুরোনো ঘরে একসঙ্গে পেয়েছে আর আশ্চর্যজনকভাবে ঘরের দরজার তালা খোলা ছিল।কিন্তু আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন দরজাটা বন্ধ ছিল।ওই ঘটনার পরে আর সাহিত্যর সাথে আমার দেখা হয়নি। গ্রামের সবাই বলে বিচারে নাকি ও সব আমার দোষ বলেছে।আমি নাকি জোর করে ওর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে চেয়েছিলাম।”


“থামো আপা।দয়া করে থামো।আমি আর শুনতে পারছি না।এরপরও তুমি ওই লোকের সাফাই গাইবে?”


আরজুর প্রশ্নের প্রেক্ষিতে প্রার্থনা দৃঢ় গলায় বলল,


“হ্যাঁ গাইবো।তার কারণ ও যদি নিজে বাঁচার জন্য এমনটা করত তাহলে নিজ মুখে নোংরামির কথাটা স্বীকার করল কেন যেখানে এমন কিছু ঘটেইনি?এই কথাটা স্বীকার না করলে তো ওর নিজেকে প্রমাণ করতে আরো সুবিধা হতো তাই না?”


“বেশ মেনে নিলাম তোমার কথা।কিন্তু আমার প্রশ্ন একটাই উনি যদি তোমাকে এতই ভালোবেসে থাকেন তাহলে এখন কোথায়?ছেড়ে গেলেন কেন?”


এই পর্যায়ে এসে প্রার্থনা থেমে গেল।এই প্রশ্নের উত্তর তো ওর নিজের কাছেও নেই।প্রার্থনা তো নিজেই হাতড়ে বেড়াচ্ছে এর উত্তর।ওকে চুপ করে থাকতে দেখে আরজু নির্জীব কন্ঠে বলল, 


“তোমার ভালোবাসা হেরে গেছে আপা।আমি জানি পুরো ব্যাপারটার সাথে ফিরোজ আর আমাদের কুলাঙ্গার ভাই জড়িত।আর আমি এটাও জানি তোমার উনিও খুব ভালোভাবে এইসব কিছু জানতেন।এখন উনি কিসের ভয়ে না লোভে পড়ে এমন করেছেন সেটা আমি জানিনা।তবে উনিও অপরাধী।”


কথাটা বলে আরজু উঠে বারান্দায় চলে গেল। প্রার্থনা ফ্যালফ্যাল করে সেদিকে তাকিয়ে থাকলো।মনে মনে ভাবল,


“সত্যি কি আমি ভুল মানুষকে ভালোবেসে ছিলাম?”

_______


রাত তখন তিনটা বাজে।এই সময়টাকে অবশ্য মাঝরাতই বলা চলে।ঘরের দরজায় খুব হালকা ভাবে করাঘাতের শব্দ পেতেই আরজু আর প্রার্থনার ঘুম ভেঙে গেল।আরজু চোখ খুলে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে সময়টা দেখতেই চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল।আরজু প্রথমে ভেবেছিল হয়তো সকাল হয়ে গেছে সেজন্য মা ঘুম থেকে উঠতে বলছে।


আরজু বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে পাশে থাকা প্রার্থনার দিকে তাকালো।প্রার্থনা ইশারায় সময়টা জিজ্ঞেস করতেই আরজু বলল তিনটে বাজে।সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থনার চোখ কপালে উঠে গেল।দুজনেই এবার একটু ভয় পেল।দরজায় করাঘাতের শব্দ টা এখন দুজনের কানে ভয়ংকর লাগছে।এত রাতে তো কখনো কেউ আসেনি আর না আজ আসার কথা।


আরজু কাঁথাটা সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ধীর পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।এই সাহসী মেয়েটারও আজ ভীষণ ভয় করছে।এই বাড়িতে নিজের মানুষ গুলোই যে ওদের শত্রু।


দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আরজু মৃদু কম্পিত গলায় আগন্তুকের পরিচয় জানতে চাইলো কিন্তু কারো কণ্ঠ শুনতে পাওয়া গেল না।এবারে আর না খুলে উপায় নেই।আরজু লম্বা একটা শ্বাস ফেলে মনে মনে সাহস সঞ্চয় করে দরজাটা খুলল।দরজাটা খুলতেই হন্তদন্ত পায়ে ভিতরে প্রবেশ করে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন নাসিমা।এই সময় ওনাকে এই ঘরে দেখে বিস্ময়ে দু বোনেরই মুখ হা হয়ে গেল।কিন্তু নাসিমার চোখ মুখের অবস্থা একদমই ভালো লাগছে না।মনে হচ্ছে কোন একটা বিষয় নিয়ে খুব চিন্তা কিংবা ভয়ে আছেন। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো আঁচলে মুছে নিয়ে আরজু কে উদ্দেশ্য করে ধীর গলায় বললেন,


“নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে চাইলে এখনই তোমায় সারা জীবনের মতো এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে।”


নাসিমার মুখ থেকে এমন কথা শুনে দুই বোনই ভরকালো।এইমাত্র ঘুম থেকে উঠেছে তার ওপর আবার এমন অপ্রত্যাশিত কথা যেন ওদের মস্তিষ্ক ঠিক নিতে পারছে না।


“মা কি হয়েছে একটু স্পষ্ট করে বলোতো আমায়?”


নাসিমা আরজুর মুখ চেপে ধরে চাপা গলায় বললেন,


“আস্তে কথা বলো।কেউ শুনে ফেললে আমরা কেউই আর বাঁচতে পারব না।”


প্রার্থনা আর আরজু দুজনের ভ্রুঁ দ্বয়ের মাঝে গভীর ভাঁজের সৃষ্টি হল।আরজু নিজের মুখ থেকে মায়ের হাতটা সরিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,


“ভয় পেয়ো না।ঠিকভাবে বলো কি বলতে চাইছো?” 


“আজ তুমি তোমার বাবা ভাইকে যে অপমান করলে তুমি কি ভেবেছো ওরা এর প্রতিশোধ নেবে না?ফিরোজের সাথেও তো ঝামেলা করেছো।ও কি চুপ করে থাকবে বলে তোমার মনে হয়?”

“কি করবে?মে/রে ফেলবে আমায়?”


“প্রয়োজনে সেটা করতেও ওদের হাত কাঁপবে না।ফিরোজ অন্য জায়গায় গিয়েছে জন্য বেঁচে গেলে আজ।ও বলেছে কাল সকাল দশটার মাঝে আসবে তারপর প্রার্থনার বিয়ের আগে তোমার আর ফিরোজের বিয়ে দেবে ওরা।তাই বলছি সকাল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করোনা।এই নরকের মাঝে ফাঁসতে না চাইলে বেরিয়ে যাও। ওরা সকাল আটটার আগে ঘুম থেকে ওঠে না কিন্তু তোমাকে পাহারা দেওয়ার জন্য কাল উঠতেও পারে।” 


আরজুর মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল।এত রাতে একা মেয়ে কি করে যাবে?বাসের টিকিট কাটাও শেষ।এদিকে হাতে বেশি টাকা পয়সাও নেই।সব থেকে বড় কথা এই সময়টা একটা মেয়ের জন্য বাইরের পরিবেশ একটুও নিরাপদ না।আরজু নিজেকে যতই সাহসী হিসেবে দাবি করুক কিন্তু এই বিষয়গুলোতে সে খুব ভীতু।পশু গুলোর সাথে একা পেড়ে উঠবে না যে।


ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল।প্রার্থনা উৎকন্ঠিত গলায় নাসিমা কে বলল,


“কিন্তু মা এত রাতে আরু একা একা কি করে যাবে?”


নাসিমা আরজুর দিকে তাকিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল,


“পারবে।ও সব পারবে।”


আরজু যেন নিজেই সাহস করে এই কথাটা বলতে পারছেনা যে ও পারবে।আবার ভয় করছে এটা ভেবেও যদি ফিরোজের লোকেরা ওকে ধরে ফেলে।কথার জোরে তো ওদের সাথে পেরে ওঠা সম্ভব না।আরজুকে চুপ করে থাকতে দেখে নাসিমা তাড়া দিয়ে বলল,


“চুপ করে বসে আছো কেন?তৈরি হও তাড়াতাড়ি। খুব দরকারী জিনিসগুলো নিয়ে যাও শুধু।এত ভেবোনা।এখন দেরি করলে আর কখনো নিজের জীবন নিয়ে ভাবার সুযোগ পাবেনা।এতদিন সবার সাথে লড়াই করেছো নিশ্চয়ই বন্দি জীবন কাটানোর জন্য না?”


সত্যিই তো।আরজু তো এই বন্দি জীবন কাটানোর জন্য এতদিন এত সংগ্রাম করেনি।আরজু তো একটু বাঁচতে চেয়েছে স্বাধীন ভাবে।ও তো এতটা দুর্বল না।যা হবে দেখা যাবে।কোন না কোন পথ ঠিক পেয়ে যাবে।তাড়াহুড়ো করে প্রার্থনার বোরকা আর হিজাব পরে মুখ ঢেকে ফেললো।শুধু চোখ দুটো বের করে রাখলো।আসার সময় যে ব্যাগ নিয়ে এসেছিল সেটাও নিল না।হাত ব্যাগেই দরকারি কয়েকটা জিনিস আর টাকাগুলো তুলে নিল।এসবের মাঝে আচমকা আরজুর মনে একটা প্রশ্ন এলো।নাসিমা কেন আমায় সাহায্য করলো ওকে?

নেকাবটা খুলে নাসিমার দিকে সন্দেহী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে প্রশ্ন করলো,


“তুমি আমাকে সাহায্য করছো কেন মা?ধরতে গেলে তুমিও তো ওদের দলেরই লোক।”


“এখন এসব কথা বলার সময় না।আমি কার দলের লোক সেসব এখন ভেবে তোমার কোন লাভ নেই।ভালোর জন্য বলছি তাড়াতাড়ি পালাও।আমি তোমার বাবা আর ভাইয়ের ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে এসেছি।মেইন গেটও খোলা রেখেছি।কোনরকম কোন শব্দ না করে চুপচাপ বেরিয়ে যাও।আর নাম্বার বদলাবে। দরকার পড়লে ঠিকানাও বদলাবে।কখনো যদি গ্রাম থেকে আমি কিংবা প্রার্থনা তোমার খোঁজ করি,জানতে চাই তুমি কোথায় আছো তাও নিজের আসল ঠিকানা কক্ষনো বলবে না।বলা যায় না হয়তো ওরা আমাদের ভয় দেখিয়ে তোমার খোঁজ করতে চাইলো।আর যদি কখনো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হও যে ওরা তোমায় বলছে যে তুমি ফেরত না এলে আমার কিংবা প্রার্থনার কিছু করে দেবে তাও ফিরবে না।ওরা শুধু ভয় দেখাতেই জানে বাদবাকি কিছু করতে পারবে না।


“আমি তোমায় বিশ্বাস করতে পারছি না মা।আজ অব্দি কখনো কোন বিষয়ে তুমি আমায় সাপোর্ট করোনি।সব সময় আমার সব কাজে বিরোধিতা করেছো।তুমি তো ভালোই বাসো না আমাদেরকে তাহলে কেন আমায় সাহায্য করছো?”


নাসিমা নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,


“আমি যদি তোমাদের প্রতি নিজের ভালোবাসা দেখাতে চাইতাম তাহলে এতদিনে তোমরা টিকতে পারতে না এই বাড়িতে।সাহায্য তো তোমাকে আমি অনেক করেছি কিন্তু সবটাই লুকিয়ে লুকিয়ে।”


“আমি তাও তোমায় বিশ্বাস করতে পারছি না।সত্যি করে বলো মা তুমি আমায় সাহায্য করতে চাইছো তো?এ জন্য আবার নতুন করে কোন বিপদে পড়বো না তা আমি?”

নাসিমা মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,


“তোমায় জন্ম দিয়েছি আমি।এর জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমায়।প্রার্থনা হওয়ার পরেই তোমার বাবা ভীষণ রাগারাগি করেছিল।ওনার মেয়ে পছন্দ না।বংশে যত ছেলে হবে তত ওনার ক্ষমতা বাড়বে।মেয়েদেরকে বিয়ে দিলে তো ওরা পরের ঘরে চলে যাব।ওরা শুধুমাত্র দুর্বলতা।ওরা কখনো তার হাতে টাকা এনে দিতে পারবে না বরং ওদের পিছনে আরও তাকে টাকা খরচ করতে হবে।এক কবিরাজ আছে তাকে তোমার বাবা খুব মানে।তুমি আমার পেটে আসার পর উনি দেখে বলেছিলেন যে এবারও আমার মেয়ে হবে।তোমার বাবা সেসব শুনে অনেক রাগারাগি করেছিল।আমার গায়ে হাতে তুলেছিল এবং বলেছিল যেন তোমাকে জন্ম না দেই।কিন্তু আমি সেসব করিনি।তুমি আমার পেটে থাকাকালীন অনেক লড়াই করেছি আমি সেজন্যই বোধ হয় তুমি নিজেও এখনো এত লড়াই করার শক্তি পাও।আর কখনো বিশ্বাস করতে হবে না আমায়।এই প্রথম আর শেষবারের জন্য বিশ্বাস করে চলে যাও এখান থেকে।আর কোনদিন এই গ্রামে পা রেখোনা।ওরা তোমায় প্রার্থনার অজুহাত দিয়ে ডাকতে পারে তাও এসো না।ভালো থেকো।”


আরজু কে দেখতে ভীষণ অনুভূতিহীন মনে হলো।ভীষণ স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,


“তোমাকে আর আপাকে রেখে চলে যাব?ওরা তো তোমাদেরও কোন ক্ষতি করতে পারে?”


“সেসব আমরা বুঝে নেব।তুমি যাও।আরেকটা কথা আর কখনো তোমায় বলার সুযোগ পাবো কিনা জানি না তবে একটা কথা মনে রেখো তুমি আমার মেয়ে,তোমায় ভালোবাসি আমি।কখনো হয়তো সেভাবে প্রকাশ করতে পারিনি কিন্তু তোমাকে আমি ভালোবাসি।আমার সারা জীবনে যত কষ্ট হয়নি তার থেকে অনেক বেশি কষ্ট হয়েছে তোমাকে এই পৃথিবী তে আনতে।যা করেছি তোমার ভালোর জন্য করেছি।”


________

সময়টা তখন ভোর পাঁচটা।সেই মাঝরাতে গ্রামের রাস্তায় গাড়ি পাওয়া ছিল অসম্ভব ব্যাপার প্রায়।তবে ভাগ্য সহায় হয়েছিলো।বাসস্ট্যান্ডে এসে জানতে পারলো যে প্রথম বাস ছাড়বে সাড়ে পাঁচটায়।কোন উপায় নেই আরজুর কাছে অপেক্ষা করা ছাড়া।একবার ঢাকার বাসে উঠতে পারলে অনেকটা নিশ্চিত হয়ে পড়বে।ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাওয়াটা একটু রিস্কের হয়ে যেতে পারে।কাউন্টারে গিয়ে বসে রইল।দুশ্চিন্তাগুলো সব একেবারে জেঁকে ধরেছে।আরজু নাহয় বেঁচে চলে এলো কিন্তু সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর যখন বাবা ওকে পাবে না তখন তো সব রাগ দেখাবে প্রার্থনার উপরে।কে জানেন ওর মা বলবে কিনা যে উনি আরজু কে পালাতে সাহায্য করেছে।


যদিও নাসিমা কে কেউ সন্দেহ করবে না যদি না উনি নিজ থেকে কিছু বলেন।কিন্তু প্রার্থনাকে সন্দেহ করার যথাযথ কারণ আছে।যদি ওকে মা/রে,যদি ওর কোন ক্ষতি করে বা নাসিমারই কোন ক্ষতি করে দেয়?না আর ভাবতে পারছে না আরজু।একটু ফোন করে যে খোঁজ খবর নেবে কেমন আছে কোন ঝামেলা হয়েছে কিনা সেই উপায়ও নেই।


হাত ঘড়িতে সময় দেখলো,৫ঃ২০ বাজে।বাস এসে গেছে,অনেক যাত্রী উঠেও পড়ছে।আরজু বাসে ওঠার আগে ভাবলো এক বোতল একটু পানি কিনে নেওয়া দরকার।কাউন্টারের পাশেই একটা দোকান খোলা পেল।ভাবলো ওই দোকান থেকে পানি নেওয়া যাবে।দোকানে যেতে নিয়ে হুট করে থেমে গেল আরজু।তাড়াহুড়ো করে পিছন ঘুরে তাকালো।খেয়াল করলো হৃদপিন্ডের গতি কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।ফিরোজ এখানে কি করছে?নাসিমার কথা অনুযায়ী তো ফিরোজ শহরের বাইরে ছিল তাহলে এত সকাল সকাল তার ওপরে বাসস্ট্যান্ডে কি করছে?তাহলে কি ওরা সব জেনে গেছে?আরজু কে কি ধরতে এসেছে?ওর কি পালানো হবে না?এতগুলো বছরের এত সংগ্রাম কি তবে সব মিথ্যা হয়ে গেল?

আরজু জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।খুব স্বাভাবিক গতিতে গিয়ে বাসে উঠল।টিকিটে সিট নাম্বারটা দেখে বেছে বেছে নিজের সিটটাতে গিয়ে বসে জানালাটা বন্ধ করে দিল।এখান থেকে ফিরোজকে দেখা যাচ্ছে।তবে ওকে দেখে মনে হচ্ছে না যে আরজুর খোঁজে এখানে এসেছে।বেশ স্বাভাবিক দেখাচ্ছে।সিগারেট খাচ্ছে আর নিজের চামচেদের সাথে কথাবার্তা বলছে।আরজু একটু নিশ্চিন্ত হলো।আবারো হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিল ২৫ বাজে।বাসটা ছাড়লে যেন আরজু প্রাণ ফিরে পায়।এই কয়েকটা মিনিটই আর যেতে চাইছে না।মনে হচ্ছে কয়েক ঘন্টা পেরিয়ে যাচ্ছে তবু বাস ছাড়ছেনা।


অবশেষে বাসটা ছাড়লো।ফিরোজ এখনো দোকানে দাঁড়িয়ে আছে।বাসটা ধীরে ধীরে চলতে শুরু করলো এবং খুব তাড়াতাড়ি ফিরোজ দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে গেল।একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল আরজু।এই যাত্রায় অন্তত বেঁচে গেছে।পরে কি হবে সে নাহয় পরে দেখা যাবে।


চলমান।

No comments

Theme images by rion819. Powered by Blogger.